
চট্টগ্রামে তুচ্ছ ঘটনায় পায়ের আঘাতে দরিদ্র এক অন্তঃসত্ত্বার সন্তান নষ্ট করার দায়ে মো. সোহেল (৩৫) নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
২৩ জুলাই বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে নগরের বায়েজিদ শেরশাহ মাইজপাড়া আলী মিয়ার কলোনিতে এ ঘটনা ঘটে। গ্রেফতারকৃত সোহেল ওই এলাকার মো. হানফের ছেলে বলে জানা গেছে। আহত অন্তঃসত্ত্বা সালমা বেগম বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (চমেক) ৮০ নম্বর ওয়ার্ডের ৩৬ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। এ ঘটনায় তার স্বামী রিকশা চালক মো. ইসমাইল হোসেন বাদী হয়ে বায়েজিদ বোস্তামি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, তাদের আট বছর বয়সী বড় ছেলে প্রতিবেশী সোহেলের বাবার চায়ের দোকানে যায়। সেখানে দুষ্টামির অজুহাতে বাচ্চাটিকে মারধর করেন সোহেল। খবর পেয়ে তার স্ত্রী সেখানে গেলে তাকেও এলোপাতাড়ি মারধর করা হয়। এ সময় সোহেল তার ৪ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর তল পেটে স্ব-জোরে পা দিয়ে আঘাত করেন । তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন জড়ো হতে দেখলে সোহেল ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
অন্তঃসত্ত্বার স্বামী মো. ইসমাইল হোসেন জানান, বিষয়টি তাকে ফোনে জানানো হলে তিনি ঘটনাস্থলে যান। স্ত্রীর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ দেখে স্থানীয়দের পরামর্শে থানায় গেলে পুলিশ তাকে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। তার গর্ভে থাকা ৪ মাসের সন্তানটি নষ্ট হয়ে গেছে বলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়েছেন। যে পরিমাণ রক্তক্ষরণ হয়েছে সঠিক সময়ে তাকে হাসপাতালে নেওয়া না হলে, হয়তো বাঁচানো সম্ভব হতো না।
কান্নাজনিত কণ্ঠে ইসমাইল হোসেন আরও জানান, নোয়াখালীর সুবর্ণচর চর নোঙ্গলিয়ার ভূইয়া গ্রামে তাদের বাড়ি। দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে বায়েজিদে সাড়ে ৩ হাজার টাকা ভাড়ায় একটি বাসায় থাকেন। রিকশা চালিয়ে কোনভাবে জীবিকা নির্বাহ করেন। লকডাউনের কারণে সড়কে যাত্রী নেই। সারাদিন রিকশা চালিয়ে যে আয় হয়, তাতে সংসার চালাতেই হিমশিম খাচ্ছে। স্ত্রীর চিকিৎসা করানোর মতো সামর্থ্য তার নেই। তবুও স্ত্রীকে বাঁচানোর আকুতি নিয়ে স্বজনদের দুয়ারে দুয়ারে হাত পাতছেন তিনি। লকডাউনে আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে কেউই সহযোগিতা করতে পারছে না।
বায়েজিদ বোস্তামি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামান জানান, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র তার ছেলেকে মারধর করা হয়। বিষয়টি জানতে গেলে তাকেও মারধর করা হয়। একপর্যায়ে তার তল পেটে স্ব-জোরে লাথি দেয় সোহেল।
ভুক্তভোগী অন্তঃসত্ত্বাকে থানায় নিয়ে আসার পরপরই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করানো হয়েছে। আসামীকেও তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক, পরিবারটিও দরিদ্র, প্রতিনিয়ত তাদের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।