
চট্টগ্রামে ৫ হাজার টাকার জন্য জমজ নবজাতকের মৃত্যু। ডবলমুরিং থানার ঝর্ণাপাড়ার মাতৃসেবা নরমাল ডেলিভারি সেন্টারের বিরুদ্ধে দুই নবজাতককে হত্যার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী পরিবার ।
জানা যায়, চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানার হাড্ডি পাড়ার বাসিন্দা টেম্পো চালক মনির হোসেনের প্রসূতি স্ত্রীকে আজ দুপুর ২টায় ঝর্ণাপাড়ার মাতৃসেবা নরমাল ডেলভারি সেন্টারে ভর্তি করা হয়। ২টা ৩০ মিনিটের দিকে দুইজন ছেলে শিশুর স্বাভাবিক জন্ম হয়। জন্মের কিছুক্ষণ পর বড় বাচ্চাকে অক্সিজেন দেওয়ার প্রয়োজন হলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার কথা বলেন কর্তব্যরত ডাক্তার। এ সময় ডেলিভারি সেন্টারের বিল দাবি করা হয় দশ হাজার টাকা। অসহায় পিতা ৫ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। বাকি ৫ হাজার টাকা পরিশোধ না করায় বাচ্চা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে ডেলিভারি সেন্টার কর্তৃপক্ষ। ৫ হাজার টাকা পরিশোধ করতে না পারায় নবজাতকের উন্নত চিকিৎসার জন্য সময় ক্ষেপণ হয়। এই অবস্থায় নবজাতক দুইজনের মৃত্যু হয় বলে জানান তাদের পিতা মনির হোসাইন। মৃত্যুর পরেও নবজাতকদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেনি কর্তৃপক্ষ। উল্টাে পরিবারকে নানা ভাবে ভয়ভীতি দেখান বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীর পরিবার। পরে এলাকাবাসী ও পুলিশ এসে নবজাতক দুই জনকে উদ্ধার করে।
এ ব্যাপারে নবজাতকের পিতা মনির হোসেন বলেন, আমি কাজ থেকে আসলাম দুপুরে আমার বউ কান্নাকাটি করে বলছে আমার পেটে ব্যথা করছে। আমার পকেটে ছিল সাতাইশত টাকা। কোনরকম উপায় না দেখে আমি আমার বউকে নিয়ে এখানে আসি। ওদের হাতে পায়ে ধরে আমি বলি আমি এতিম মানুষ আমার বউকে দেখেন। ওরা বলেছে কিছু খরচপাতি দিতে পারবেতো। আমি বলি হ্যা পারবো একেবারে কিছু যে পারবো না তা না। তো এগুলো বলার পর তারা ভর্তি করে এবং ২০ মিনিট পরে ওরা আমাকে ডেকে বলছে নরমালে আপনার দুইটা সন্তান হয়েছে। আমি গিয়ে আমার বাচ্চাদের দেখি ওরা হাত পা নাড়ছে। এরপর ওনারা বলেন এখন আপনার বাচ্চা একটাকে অক্সিজেনের ইমারজেন্সিতে ভর্তি করতে হবে। এরপর আমি বলি আপা আপনার কত টাকা আসছে সেটা বলেন আমি আপনার টাকা দিয়ে দিচ্ছি। উনি আমাকে বলছেন ১০ হাজার টাকা আসছে আপনার। আমি বললাম এত টাকা কেত্থেক দিব আমি। উনি বলেন ১০ হাজার টাকা থেকে এক টাকাও কম হবেনা। আমি ৫ হাজার ৩০০ টাকা দিই। দেওয়ার পরেও তিনি আমার বাচ্চা দিচ্ছেন না। আটকে রেখেছে আমার বাচ্চা। ৩ ঘণ্টা পরে এলাকাবাসিসহ এক হয়ে আমার বাচ্চাকে মৃত উদ্ধার করেছে। এটা আমি কিভাবে মেনে নেব বলেন। আমার একটা বাচ্চা মরা কেন এই কথা আমি যখন বলি তখন উল্টা আমাকে হুমকি দিচ্ছে আমাকে নাকি মামলা দিবে। নার্স ডাক্তার আমাকে ঠেলে বের করে দিয়েছে।
নবজাতকের ফুফু জানান, আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে তারা, এগুলো কোন কথা বাচ্চাগুলোকে আটকে রেখে তাদের জীবনটা শেষ করে দিল।
স্থানীয় আবুল হোসেন জানান, আমরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। এটা কোনভাবে মেনে নেয়া যায় না।
পরে পুলিশ খবর পেয়ে অভিযুক্ত নার্স এবং ডাক্তারকে ডবলমুরিং থানায় নিয়ে যায় এবং ডেলিভারি সেন্টারটি বন্ধ করে দেয়। নবজাতকের পিতা মনির হোসেন মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান।