
হ্যা এটাই সত্য। জাতির কাছে পুলিশ পাঙ্গাস মাছ। পাঙ্গাস মাছ যেমন শুধু মল এবং আবর্জনা খেয়েই বড় হয় , অথচ মল সব মাছই একটু একটু খায় কিন্তু দুর্নাম শুধু পাঙ্গাস মাছেরই হয়। তেমনি পুলিশই শুধু অপকর্ম, দুর্নীতিতে লিপ্ত আর কেউ অপকর্ম দুর্নীতি করেন না এমনই ধারণা জাতির। মানবতা, মনুষ্যত্ব, আবেগ-বিবেক, অনুভূতি, পাশবিকতা সবকিছু মিলিয়েই সমাজ তথা রাষ্ট্র। সমাজের সামাজিক ভারসাম্য রক্ষা করতেই রাষ্ট্রের উৎপত্তি। রাষ্ট্রের জনসাধারণকে শৃংখলিত করতে দরকার একটি বাহিনী, একটি গোষ্ঠি। সেই গোষ্ঠি হিসেবে পুরো বিশ্বে পরিচিত পুলিশ বাহিনী।
পুলিশ- শব্দটা শুনলেই কেমন যেন একটা নেগেটিভ ধারণা কাজ করে আমাদের দেশের মানুষের মনে। পুলিশ যে একটা পেশার পদবি তা ভুলে যায়। বরং মনে করে পুলিশ সমাজের একটা ভিন্ন প্রজাতি।
পুলিশ বাহিনীতে যাঁরা সততা ও সাহসিকতার জন্য পদক পান, তাঁরা যেমন উৎসাহিত হন, কাজের স্বীকৃতি পান, তেমনি অন্য পুলিশ সদস্যরাও উদ্বুদ্ধ হন৷ আর পুলিশে কেউ কেউ ব্যক্তিগতভাবে অপরাধে জড়িয়ে পড়েন, তার জন্য তিরষ্কারো হয়, ক্ষেত্র বিশেষে যায় চাকরি৷
তবে এর পেছনে এ পেশার সাথে সংশ্লিষ্ট মানুষদের বেআইনি কার্যক্রম অনেকটা দায়ী। দেশের মূল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলতে বোঝায় পুলিশ বাহিনীকে। কিন্তু অপরাধ রোধ করতে গিয়ে এ পুলিশ বাহিনীর কিছু সদস্য তার সততা বা নিষ্ঠার জায়গাতে অনেক ক্ষেত্রে অনড় থাকতে পারে না। আর সে কারণে মন্দ পুলিশের আড়ালে হারিয়ে যায় ভালো পুলিশ।
পুলিশের যা বেতন ভাতা তা দিয়ে নিজেদের নিত্যদিনের চাহিদা পূরণ করতে হিমশিম খেতে হয়। এক্ষেত্রে পুলিশের অপকর্মের পেছনে বেতনও একটি বিষয় বলে জনসাধারণ মনে করেন। এমন পরিস্থিতিতে বেশিরভাগ পুলিশ সততা নিয়ে কাজ করে গেলেও কিছু পুলিশ মাদক সন্ত্রাসসহ অন্যান্য অনৈতিক কাজে সহযোগী হয়ে পড়ে অপরাধীদের। যার কারণে সমাজের মানুষ পুলিশের প্রতি আস্থা আনতে পারেন না। থানায় যাওয়া মানে টাকা ছাড়া প্রতিকার পাওয়া যাবে না এটাই মনে করেন অনেকে। আর এ ধারণা যে অমূলক তা কিন্তু নয়।
তবে জনবান্ধব পুলিশ বাহিনী তৈরি করতে বর্তমানে কাজ হচ্ছে উচ্চ পর্যায়ে। সত্য আর ন্যায় প্রতিষ্ঠার শপথে অপরাধ দমন করতে হলে মন্দ পুলিশ নয় ভালো পুলিশ দরকার।
দিন শেষে এই পুলিশই কারো পিতা, কারো পুত্র, কারো ভাই। কাজেই পুলিশ মানেই ভয়ংকর কিছু নয় তারা আমাদের বন্ধু, ভাই এই কথাও মাথায় রাখতে হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে করোনাকালে এই দেশটাকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে খুব সুন্দর করেই রাষ্ট্রীয় কাজ সমাধান করেছেন এই পুলিশ বাহিনী । এই সময় পুলিশের অনেক চৌকষ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। অনেকে মৃত্যুবরণ করেছেন দেশের জন্য। আমরা কি সে সব পুলিশের সদস্যদের কথা মনে রেখেছি । তাদের পক্ষে খবর প্রকাশ করছি, খোজ নিয়েছি তাদের পরিবারের সদস্যরা কেমন আছে ? তাদের দিন কেমন করে চলছে ?
আমাদের সমাজের প্রতিটি সেক্টরে, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ঘুষ দুর্নীতি ওতোপ্রােতভাবে জড়িয়ে গেছে, পুলিশ প্রশাসনে বা আইন শৃংখলা বাহিনীতে এর বিচার হলেও এসব প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিগুলোতে কোন বিচার ব্যবস্থা নেই বলতে হয়। অনেক সময় তারা ধরা ছোয়ার বাইরেই থেকে যান। সমাজে এরকম আরো অনেক সেক্টর আছে যেগুলো নিয়ে তেমন সমালোচনা নেই কিন্তু দুর্নীতি-অপকর্মে পাঙ্গাস মাছই বারেবারে সমালোচিত হচ্ছে। পাঙ্গাস মাছের নেতিবাচক চরিত্রকেই বারেবারে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে।
এখন দেখা যায় কোন পুলিশের মন্দ দিকটা নিয়ে সমালোচনা হয় বেশি । ভালো পুলিশের ভালো দিক নিয়ে আলোচনা হয় কম, এখন আমরা যদি সমাজে খারাপের সংখ্যা কমিয়ে ভালোর সংখ্যা বাড়াতে চাই তাহলে পুলিশের ভালো দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করতে হবে বেশি।
সোনাগাজী মডেল থানা থেকে প্রত্যাহারের পর বরখাস্ত হওয়া ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন দেশজুড়ে বিতর্কিত। তিনি এখন দেশবাসীর কাছে ঘৃণার পাত্রে পরিণত হয়েছেন। মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির বক্তব্য ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার অপরাধে তাকে ৮ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়া নুসরাতকে বর্বরোচিতভাবে হত্যার বিষয়টিকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টার ঘটনায় পুলিশ বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে পুলিশ সদর দফতরের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
আমরা ওসি প্রদীপ কাণ্ডও দেখলাম। একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা সেদিন বলেছেন, এ ঘটনায় তাঁরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন। পুলিশের ভাষ্য হলো, এ ঘটনা যিনি ঘটিয়েছেন সব দায় তাঁর। এর সঙ্গে বাহিনীর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
এছাড়া পুলিশের আরো অনেক অপরাধের খবর আমরা বিভিন্ন সময় শুনে আসছি সেগুলো নিয়ে রগরগে খবর আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যমেও পাই। পুলিশের সমালোচনা হয় এতে ক্ষেত্র বিশেষে হয় বিচার। কিন্তু এর বাইরেও বিষয় আছে।
আমরা রাস্তায় পাগলি বাচ্চা প্রসব করলে সেই বাচ্চাসহ মাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করাতে দেখেছি এক পুলিশ সদস্যকে, বাস রাস্তার পাশে পুকুরে পড়ে গেলে কেউ এগিয়ে আসেনি যাত্রীদের বাচাতে, সে সময় আমরা দেখেছি এক পুলিশ সদস্যকে পুকুরে ঝাপিয়ে পড়ে অসহায় যাত্রীদের উদ্ধার করতে। এছাড়াও সড়ক দুর্ঘটনায় যেসব ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন দেহ রাস্তায় পড়ে থাকে সে লাশগুলো বহন করে দিনশেষে পুলিশ, এসব খবর আমরা ফলাও করে প্রচার করছি না, করলেও একদিন দুদিন। এরপর বেমালুম ভুলে যাচ্ছি পুলিশের ভাল কাজের মূল্যায়ন করা। দেশে আইন-শৃংখলা বাহিনী ছাড়াও আরো অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যাদের দুর্নীতির চিত্র প্রকাশিত হচ্ছে না । ঘুরে ফিরে সেই পুলিশ বাহিনীর চিত্রই বারেবারে সমালোচিত হচ্ছে। তাই জাতির কাছে পুলিশ পাঙ্গাস মাছ এই বক্তব্যই জনসাধারণের ।