দুবাইয়ের বুর্জ খলিফায় কোটি টাকার ফ্ল্যাট কেনার আগে কলকাতায় বস্তিতে থাকতেন রবিউল ইসলাম ওরফে আপন ওরফে সোহাগ ওরফে হৃদয় ওরফে আলোচিত দুবাইয়ের স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খান। বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মো. মামুন এমরান খান হত্যা মামলার অন্যতম অভিযুক্ত আরাভ খান। মামলায় আসামি হওয়ার পরেই ভারতে আত্মগোপনে চলে যান তিনি। থাকতেন কলকাতার পাশে নরেন্দ্রপুরের বস্তি এলাকায়।
এদিকে পুলিশ হত্যা মামলার আসামি আরাভ খানের জুয়েলার্সের উদ্বোধনী আয়োজনে নির্মাতা-উপস্থাপক দেবাশীষ বিশ্বাস, হিরো আলমসহ ঢাকার বেশ কয়েক তারকা অংশ নিয়েছেন। বুধবার (১৫ মার্চ) রাত আটটায় জমকালো আয়োজনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে আরাভ জুয়েলার্স উদ্বোধন করেন তারকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান।
উদ্বোধনী আয়োজনটি উপস্থাপনা করেন দেবাশীষ বিশ্বাস। মঞ্চে এসে আরাভ খানকে প্রশংসায় ভাসান ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’খ্যাত এই নির্মাতা। তবে সাকিব আল হাসান মঞ্চে ওঠেননি।
আরাভ জুয়েলার্সের উদ্বোধনের খবর গণমাধ্যমে আসার পর জানা যায়, বাংলাদেশের পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মো. মামুন এমরান খান হত্যা মামলার অন্যতম অভিযুক্ত আরাভ খান অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে গা-ঢাকা দিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার অধীন রাজপুর-সোনারপুর পৌরসভার ফরতাবাদ এলাকায়। আসল পরিচয় গোপন করে পাঁচ-ছয় বছর ছিলেন ফরতাবাদ এলাকার উদয় সংঘ ক্লাবের পাশের একটি বস্তিতে।
সেখানে জাকির খানের ভাঙাচোরা বাসার দোতলায় মাসিক ২ হাজার রুপিতে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতেন আরাভ ও তার স্ত্রী সাজেমা নাসরিন।
এরপর জাকির খান ও তার স্ত্রী রেহানা বিবি খানের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন তারা। সেই সম্পর্ককে কাজে লাগিয়েই জাকির ও রেহানার ভারতীয় আধার কার্ড সংগ্রহ করে তাদেরই কথিত বাবা-মা হিসেবে পরিচয় দিতেন। তাদের কাগজ কাজে লাগিয়েই আরাভ ভুয়া ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি করেন বলে অভিযোগ।
সেই পাসপোর্ট দিয়ে দুবাই পালিয়ে যান পুলিশ খুনের আসামি আরাভ। এরপর থেকে গত কয়েক বছর দুবাইতেই অবস্থান করছেন আরাভ খান। এখন তিনি দুবাইয়ের বড় স্বর্ণ ব্যবসায়ী।
এর আগে ফেসবুকে আমন্ত্রিত তারকাদের সঙ্গে ছবি পোস্ট করতে দেখা গেছে আরাভকে। যিনি আরাভ জুয়েলার্সের উদ্বোধন উপলক্ষে ৬০ কেজি সোনা দিয়ে বানিয়েছেন বাজপাখির আদলে লোগো, যা তৈরিতে সময় লেগেছে প্রায় আড়াই মাস। এটা তৈরিতে খরচ হয়েছে প্রায় ৪৫ কোটি টাকা।
২০১৮ সালে পুলিশ কর্মকর্তা মামুন ইমরান খানকে হত্যার পর পেট্রল ঢেলে লাশ পুড়িয়ে গাজীপুরে এক জঙ্গলের ভেতর ফেলে দেয় দুর্বৃত্তরা। ওই মামলার অন্যতম অভিযুক্ত ছিলেন আরাভ খান। তখন থেকেই পলাতক তিনি। পরে জানা যায় প্রকৃত আসামি আরাভের পরিবর্তে সে সময় কারাগারে যায় আবু ইউসুফ লিমন নামে এক স্থানীয় যুবক।
এদিকে বাংলাদেশের ডিবিপ্রধান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলাম একজন খুনি। একজন মেধাবী পুলিশ কর্মকর্তাকে খুন করেছেন। মিডিয়ায় ও অনেকের বলার পরও সাকিবসহ অন্য তারকারা খুনের মামলার আসামির ডাকে দুবাইয়ে গেছেন। তার সোনার দোকান উদ্বোধনে যোগ দিয়েছেন।
আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে ইন্টারপোলের সহায়তায় রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানকে দেশে ফিরিয়ে এনে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো, যোগ করেন ডিবিপ্রধান।