
চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে সেলডিপো হতে বিপুল পরিমাণ স্ক্র্যাপ মালামাল চুরির ঘটনায় নিজেদের অপরাধ ঢাকতে এবার ফাসানো হলো রেলের নিরাপত্তা বাহিনীর জেনারেল চৌকির আওতাধীন পাহাড়তলী স্টেশনে দায়িত্বরত হাবিলদার কৃষ্ণ চক্রবর্তীকে।
জানা যায়, গত ২৩ মার্চ বুধবার গভীর রাতে বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের আওতাধীন চট্টগ্রামের পাহাড়তলী সেলডিপো হতে বিপুল পরিমাণ স্ক্র্যাপ মালামাল চুরির দায়ে দুইজনকে আটক করা হয়। এর পূর্বেও ১৯ ও ২০ মার্চ রাতে পাহাড়তলী সেলডিপো হতে বিপুল পরিমাণ স্ক্র্যাপ মালামাল চুরির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় চট্টগ্রাম রেলের নিরাপত্তা বাহিনীর জেনারেল চৌকির আওতাধীন পাহাড়তলী স্টেশনে দায়িত্বরত হাবিলদার কৃষ্ণ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে উঠে আসে ৫০০ টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগ। আটককৃত আসামিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হাবিলদার কৃষ্ণ কে ৫০০ টাকা করে ঘুষ দেয় বলে জানানোর পরপরই আরএনবি ট্রেনিং সেন্টারে ক্লোজড করা হয় হাবিলদার কৃষ্ণ চক্রবর্তী কে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম রেলের নিরাপত্তা বাহিনীর এক সিনিয়র সদস্য বলেন, ‘চুরির ঘটনাটি পাহাড়তলী স্টোরের আওতাধীন সেল ডিপো’তে ঘটলেও, শাস্তি পেতে হচ্ছে জেনারেল সেকশন আরএনবি চৌকির আওতাধীন পাহাড়তলী রেলওয়ে স্টেশনে দায়িত্ব পালনকারী কৃষ্ণ চক্রবর্তীকে। ঘুষ দিতে হলে তো চোর স্টোরের স্টাফদের ঘুষ দিবে। কৃষ্ণকে দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। কৃষ্ণকে ফাসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্টোর শাখার আরএনবির আরেক হাবিলদার জানান, আমাদের সিআইর বিরুদ্ধে এত অভিযোগ তার কিছু হয় না আর ৫০০ টাকার অভিযোগে তদন্ত ছাড়াই মুহুর্তেই হাবিলদার ক্লোজ। বিষয়টা পরিকল্পিত বোঝা যায়।
এদিকে, গত ২৩ মার্চ গভীর রাতে প্রথম আটককৃত আসামি আকরামের উপর চালানো হয় পৈশাচিক নির্যাতন। তাকে বাধ্য করা হয় কৃষ্ণ চক্রবর্তীকে টাকা দেওয়ার কথা বলতে। সে যদি না বলে তবে তাকে মেরে ফেলা হবে বলে প্রাণ নাশের হুমকিও দেওয়া হয়। ফেলে দেওয়া হয় আকরামের পায়ের নখ।
অভিযুক্ত আকরাম জামিনে মুক্তি পেলে জানতে পারা যায় সেই সকল চাঞ্চল্যকর তথ্য। ঘটনার বিবরণ জানতে চাইলে আকরাম জানায়,❝সেদিন রাতে আমাকে স্ক্রাব কলোনির আমার ঘর থেকে ধরে নিয়ে যায় স্টোরের চীফ ইন্সপেক্টর ইসরাইল মৃৃধা, হাবিলদার আনোয়ারসহ আরোও ২ জন হাবিলদার। আমাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় সেলডিপোর ভিতরে।
এরপর বাতি বন্ধ করে আমাকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে পিটাইতে পিটাইতে একটার পর একটা লাঠি ভাংছে। ১ টা লাঠি ভাংগার পর আমাকে পাইপ দিয়ে পিটানো হয়, এরপর হাবিলদার আনোয়ার আমাকে জোড়পূর্বক বলে, কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবি তুই কৃষ্ণ আর হাফিজকে টাকা দেস, যদি না বলস তোকে মেরে ফেলে দিবো। এখন মারলে কেউ দেখতেও আসবে না, হাত পা বেধে ফেলে দিবো। যেই আসুক তুই বলবি তুই কৃষ্ণ আর হাফিজকে টাকা দেস। আর সিআই স্যার হাসতেছিলো । আমি সেই রাতে তাদের নির্যাতন থেকে বাঁচতে তাদের কথা মেনে নিয়েছিলাম। ❞
উল্লেখ্য যে, অসংখ্য অভিযোগের পরও বিশেষ ক্ষমতায় একই পদে বহাল চিফ ইন্সপেক্টর ইসলাম মৃধা। ২০২০ সালের ২৭ জুন সেলডিপোতে রেলের মালামাল পাচারের অভিযোগে ৪ জনকে আটক করা হয়। পরদিন আটকৃত আসামীদের একজনকে ছেড়ে দেয় ইসলাম মৃধা। আসামী ছেড়ে দেয়ার অভিযোগে ইসরাইল মৃধাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও কিছুদিন যেতে না যেতেই বিশেষ ক্ষমতাবলে একই পদে বহাল থাকেন তিনি। এরপর থেকে থেমে নেই রেলের মালামাল চুরির ঘটনা। শুধু চুরির ঘটনায় ক্ষান্ত নয়, নিরাপত্তা বাহিনীর অনেক সদস্য কর্মস্থলে উপস্থিত না হয়ে বাসায় বসেই বেতন নিতে সহযোগিতা করেন তিনি। মাসিক ৭/৮ হাজার টাকা ইসলাম মৃধাকে দিলেই মিলে বাড়তি এই সুবিধা। এ বিষয়ে বেশ কিছু প্রতিবেদন গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হলে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বহু আগেই বেধে দেওয়া সময় অতিক্রম হয়ে গেলেও এখনোও পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেননি তদন্ত কমিটি।