
ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ বুধবার (২৬ মে) সকাল থেকে ভারতের উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে। এর প্রভাব থেকে বাংলাদেশ এখন সম্পূর্ণ মুক্ত। তবে ‘ইয়াস’ এর প্রভাবে অতি জোয়ার বা জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় ৯ জেলার ২৭ উপজেলার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে সার্বিক ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান এ কথা জানান। ভোলার লালমোহন উপজেলায় গাছ চাপা পড়ে একজন মারা গেছেন বলেও জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী।
ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে- শ্যামনগর, আশাশুনি, কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছা, শরণখোলা, মোংলা, মোড়েলগঞ্জ, মঠবাড়িয়া, বরগুনা সদর, পাথরঘাটা, আমতলী, পটুয়াখালী সদর, গলাচিপা, রাঙ্গাবালী, দশমিনা, মির্জাগঞ্জ, কলাপাড়া, চরফ্যাশন, মনপুরা, তজুমদ্দিন, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, ভোলা সদর, হাতিয়া, রামগতি ও কমলনগর।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য জেলা প্রশাসকদের অনকূলে পর্যাপ্ত খাদ্যসামগ্রী ও অর্থ বরাদ্দ দেয়া আছে। এছাড়াও আজ ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’র প্রভাবে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপকূলীয় ৯টি জেলার ২৭টি উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্তদের মানবিক সহায়তা দিতে ১৬ হজার ৫০০ শুকনা ও অন্যান্য খাবারের প্যাকেট সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো. মোহসীন বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে কিছু ক্ষয়ক্ষতির হিসাব প্রস্তুত করা হয়েছে। আরেকটা সভা করে স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিবেদন করা হবে। মাঠের কাজ শেষ হলে অল্প সময়ের মধ্যে আমরা সেটা করব।
উপকূলীয় ১৪ জেলার অবস্থা
সর্বশেষ জেলা প্রশাসন থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’র প্রভাবে উপকূলীয় ১৪টি জেলার অবস্থাও তুলে ধরেন প্রতিমন্ত্রী।
পটুয়াখালী
জোয়ারের পানি বেড়েছে; তবে বিপৎসীমার নিচে আছে। গতকাল সন্ধ্যায় ১৭২টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ১৪ হাজার লোক আশ্রয় নিয়েছিল। আজ সকালে তারা ফিরে গেছে। এসব লোক জোয়ারের সময় আশ্রয়কেন্দ্রে আসে এবং ভাটার সময় নিজ নিজ বাড়িতে চলে যায়। সামান্য ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে।
সাতক্ষীরা
বর্তমানে আবহাওয়া স্বাভাবিক। জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৬ ফুট বেশি রয়েছে। কোনো কোনো জায়গায় বেড়িবাঁধ উপচে জোয়ারের পানি প্রবেশ করছে। জেলায় এক হাজার ২৯২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। গত রাতে শ্যমনগর উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ২৮০ জন আশ্রয় গ্রহণ করেছিল। বর্তমানে তারা নিজ নিজ বাড়িতে চলে গেছে।
বরগুনা
বর্তমানে আকাশ মেঘলা রয়েছে এবং জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে দু-তিন ফুট বেশি বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়িবাঁধের কয়েক জায়গায় কিছু অংশ ভেঙে যাওয়ায় জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে। আশ্রয়কেন্দ্রে ৫২০ জন আশ্রয় নিয়েছিল, পরে তারা নিজ বাড়িতে ফিরে গেছেন। সামান্য ঝড়ো বৃষ্টি হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’র প্রভাবে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
ঝালকাঠি
জেলায় মোট ৪৯৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়। ৪৯৭ জন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। জোয়ারের পানির উচ্চতা বিপৎসীমার ওপর রয়েছে। কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
পিরোজপুর
মঠবাড়িয়া উপজেলার মাঝের চর বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করায় ১০-১২টি মাছের ঘের এবং কয়েক একর সবজিবাগান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। মাঝেরচর আশ্রয়কেন্দ্রে ২৫০ জন আশ্রয় নিয়েছে। উপজেলা থেকে শুকনা খাবার সরবরাহ করা হয়েছে। জোয়ারের পানি স্বাভাবিক অবস্থা থেকে তিন ফুট উপরে উঠেছে। ২৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছিল।
বরিশাল
আবহাওয়া স্বাভাবিক। এক হাজার ৭১টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়। কোনো লোক আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়নি। জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে সামান্য বেশি। কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
ভোলা
জেলায় ঝড়ো হাওয়া হয়েছে। বর্তমানে আবহাওয়া স্বাভাবিক। জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ২-৩ ফুট উপরে উঠেছিল। কিন্তু বর্তমানে নেমে গেছে। দুর্গমচরে প্রায় ২৫০টি কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং জোয়ারের পানিতে ৯০০ গরু/মহিষ ভেসে গেছে। ৬৯১টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ২ হাজার লোক আশ্রয় নিয়েছিল, তবে বর্তমানে এসব লোকজন নিজ নিজ বাড়িঘরে ফিরে যাচ্ছে। গাছ চাপা পড়ে লালমোহন উপজেলায় একজন লোক মারা গেছে।
বাগেরহাট
জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা ও মোংলা উপজেলার ২০/২১টি গ্রামে জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে। এতে ২ হাজার ৭০০ লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা হিসেবে শুকনা খাবার (চিড়া, গুড় ও খাবার স্যালাইন) সরবাহের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। সকাল থেকে রোদ ছিল। বর্তমানে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। আবহাওয়া স্বাভাবিক।
চাঁদপুর
জেলা প্রশাসন পরিস্থিতির প্রতি সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। ছিন্নমূল মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের মধ্যে বিতরণের লক্ষ্যে উপজেলাওয়ারি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পানির উচ্চতা স্বাভাবিক। সামান্য ঝড়ো হাওয়া বইছে।
লক্ষীপুর
জেলার রামগতি, কমলগঞ্জ উপজেলার নিচু এলাকায় সামান্য জোয়ারের পানি উঠেছে। কিছু রাস্তাঘাট, ব্রিজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে কোনো লোক আশ্রয় গ্রহণ করেনি। সামান্য ঝড়/বৃষ্টি রয়েছে।
খুলনা
জেলায় মোট এক হাজার ৪৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে কোনো লোক আশ্রয় গ্রহণ করেনি। ঝড়ো হাওয়া আছে। জোয়ারের পানির উচ্চতা স্বাভাবিক আছে।
ফেনী
আবহাওয়া স্বাভাবিক, কোনো সমস্যা নাই। জোয়ার পানি স্বাভাবিক। ঝোড়ো হাওয়া নেই। গতকাল ট্রলারে মাছ ধরতে গিয়ে ট্রলার ডুবে একজন মারা গেছে। ৪৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছিল, কিন্তু কোনো লোক আশ্রয় গ্রহণ করেনি।
চট্টগ্রাম
জোয়ারের পানি বাড়ছে। বর্তমানে বিপৎসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবহিত হচ্ছে। জেলার মোট ৮৩৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। কোনো লোক আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়নি।
নোয়াখালী
জেলায় মোট ৩৯০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে মোট ৩০০ জন আশ্রয় নিয়েছিল। জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ ফুট উপরে উঠেছিল। জোয়ারের পানিতে নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘরে পানি উঠেছে। কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।